ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম কমেছে যে কারণে

বিশেষ প্রতিবেদক •

ঈদুল আজহার এবারের ছুটিতে দেশের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটক সমাগমের সেই চিরচেনা রূপ না থাকলেও অপর কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমণের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বহুল আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার কুয়াকাটায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে।

আগে ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাত্র ছয় ঘণ্টায় সেখানে যাওয়া যায়। কম সময়ের পাশাপাশি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না পর্যটকরা। ফলে এবার পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে কুয়াকাটা।

কুয়াকাটার শতভাগ হোটেল-মোটেলে বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ। পর্যটকের এমন ভিড়ে হাসি ফুটেছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে। সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে,দেশের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের চিরচেনা সেই রূপ এবার দেখা যায়নি। সোমবার থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতেলী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

পর্যটকরা জানান, আগের মতো হোটেল-মোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া ও রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা নেই। ভিড় না থাকায় ইচ্ছামতো ঘোরাঘোরি করতেও কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না তাদের।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, পদ্মা সেতু দেখা, কম সময়ে কুয়াকাটা ভ্রমণ ও বন্যার কারণে এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম তুলনামূলক কম। এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। যত সম্ভব কম ব্যয়ে যাতে পর্যটকরা কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের ঢল নামে। সৈকতের বালিয়ারিতে গা ভাসিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে ওঠেন পর্যটকরা। কেউ সৈকতের বেঞ্চে বসেই সমুদ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। গঙ্গামতি থেকে লেম্বুর বন, দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের সব পর্যটন স্পটেই এখন পর্যটকদের পদচারণায় সরগরম। কোথাও যেন তিলধারনের ঠাঁই নেই।

পর্যটক রাসেল মাহামুদ বলেন, এবার খুব অল্প সময়ে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। অপর এক পর্যটক তহমিনা আক্তার বলেন, এর আগেও কুয়াকাটা এসেছি। তখন কয়েকটি ফেরি পার হয়ে আসতে হতো। অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হতো। এবার পদ্মা সেতু পার হয়ে ছয় ঘণ্টার কম সময়ে কুয়াকাটা এলাম। হোটেলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে সৈকতে বেড়িয়ে পড়েছি। তবে এবার হোটেল ভাড়া ও খাবারের মূল্য অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলে পর্যটকদের অভিযোগ রয়েছে।

হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামীম খান বলেন, এ বছর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় প্রথম ঈদে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাই তাদের হোটেলের সব রুম বুকিং রয়েছে। রুমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের রুম দিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুটুমের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কারণে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পর্যটক ছুটে এসেছেন। ছোট-বড় সব মিলিয়ে এখানে ১৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। কোনোটা এক দিনের জন্য, কোনো কোনো হোটেল দুই থেকে তিন দিনের জন্য রুম বুকিং রয়েছে। কেউ কেউ হোটেলের রুম না পেয়ে বাসা বড়িতে অবস্থান করছেন। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম হাওলাদার জানান, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।

অন্যদিকে ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশে পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের চিরচেনা সেই রূপ এবার দেখা যায়নি। সোমবার থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতেলী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

কিন্তু মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। পদ্মা সেতু দেখা, কম সময়ে কুয়াকাটা ভ্রমণ ও বন্যার কারণে এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম তুলনামূলক কম বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীমহলসহ সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকরা জানান, আগের মতো হোটেল-মোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া ও রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা নেই। ভিড় না থাকায় ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করতেও কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন সে লক্ষ্যে তিন স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি বা ছিনতাইয়ের শিকার না হন সে জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দিন-রাত কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশের বিপুল সদস্য। এ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে সংযোজন করা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

চৌধুরী মিজানুজ্জামান জানান, পদ্মা সেতু হওয়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা পৌঁছানো যাচ্ছে। এবার পদ্মা সেতু দেখার পাশাপাশি সেখান থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত দেখে আসছেন অনেক পর্যটক। সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বন্যার কারণে অনেক পর্যটক আসতে পারেননি। সব মিলিয়ে অন্য বছরের তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন কম হয়েছে।

কক্সবাজারে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস। যেখানে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। আর এসব হোটেল-মোটলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে অন্তত ২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।